২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার চোখে মায়োপিয়া দেখা দেবে
‘দূরের জিনিস ঝাপসা’ দেখার সমস্যা সারা বিশ্বেই শিশুদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। এতে উগ্বেগে রয়েছেন বাবা-মা ও চিকিৎসকেরা।
১৯৮০ ও ১৯৯০ দশকের শেষের দিকে সিঙ্গাপুরের মা-বাবারা তাদের সন্তানদের মধ্যে উদ্বেগজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করতে শুরু করেন। সামগ্রিকভাবে গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশটির মানুষের জীবন সেই সময়ে ব্যাপকভাবে উন্নতির দিকে যাচ্ছিল। নতুন প্রজন্মকে শিক্ষার প্রবেশাধিকার দেশটির সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দেয়। তবে কিছুটা কম ইতিবাচক প্রবণতাও তখন লক্ষ্য করা যায়, বহুসংখ্যক শিশুর চোখের সমস্যা তথা নিকটদৃষ্টি (হ্রস্বদৃষ্টি) বা মায়োপিয়া বাড়ছিল।
দেশটির এই ‘দৃষ্টি সঙ্কট’ কেউ থামাতে পারেনি। এর হার ক্রমাগত বাড়তে থাকে। বর্তমানে, সিঙ্গাপুরে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৮০ শতাংশের মায়োপিয়া সমস্যা রয়েছে। দেশটিকে এখন ‘বিশ্বের মায়োপিয়া রাজধানী’ বলা হয়।
এ বিষয়ে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল আই সেন্টারের (এসএনইসি) সহযোগী অধ্যাপক এবং সিনিয়র কনসালটেন্ট অড্রে চিয়া বলেছেন, ‘আমরা ২০ বছর ধরে (এই) সমস্যাটির মধ্যে রয়েছি। তাই আমরা প্রায় অসাড় হয়ে গেছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন সিঙ্গাপুরের প্রায় সবাই মায়োপি’।
সিঙ্গাপুরে যা ঘটেছে তা এখন সারা বিশ্বে ঘটতে দেখা যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভিন্ন জীবনধারার দেশগুলোতে এই সমস্যা বাড়ছে।
এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় ৪০ শতাংশের মধ্যে এই মায়োপিয়া সমস্যা দেখা দিয়েছে, যা ১৯৭১ সালের থেকে ২৫ শতাংশ বেশি। যুক্তরাজ্যেও একইভাবে এই হার বেড়েছে।
কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও চীনের মূল ভূখণ্ডের কিশোর ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় তাদের পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও চীনে এই সমস্যার হার ৮৪ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে।
বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক জনসংখ্যার চোখে মায়োপিয়া দেখা দেবে। সমস্যাটি আগের চেয়ে দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
অড্রে চিয়া বলেন, ‘চীনে শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া নাটকীয়ভাবে বেড়েছে, ৭৬- ৯০ শতাংশে পৌঁছেছে।
আমাদের মধ্যে অনেকে এই সমস্যাটিকে কোনো সমস্যাই মনে করেন না। ধরে নেন, চশমা ব্যবহার করলেই চলে। কিন্তু গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে, ‘মায়োপিয়া’ চিন্তার বিষয়। এটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা এবং অন্ধত্বের অন্যতম প্রধান কারণ।
বড়দের এই সমস্যা দেখা দিলে তারা বলতে পারে যে, তার চোখের এই সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা যখন শিশুদের বেলায় ঘটে, তখন শিশুটি তা বুঝতে পারে না। তারা চোখে দূরের সিনিজ কম দেখার বিষয়টি শুরুতে অবিভাবকদের বলতে পারে না।
ফলে শিশুদের ক্ষেত্রে সমস্যাটি শনাক্ত করতে দেরি হয়ে যায়। এটি শিশুদের তাদের স্কুলে শেখার ও দৈনন্দিন জীবন উপভোগ করার ক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
৮ থেকে ১২ বছরের একটি শিশুর মধ্যে যদি মায়োপিয়া দেখা দেয়, তবে শিশুটি যখন প্রাপ্তবয়স্ক হয় তখন অবস্থা গুরুতর হতে পারে, যা শেষ পর্যন্ত তাদের দৃষ্টিশক্তিকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। যেমন- গ্লুকোমা, রেটিনাল বিচ্ছিন্নতা, ছানি এবং মায়োপিক ম্যাকুলোপ্যাথির সাথে সম্পর্কিত সমস্যা সৃষ্টি করে।
এই বৈশ্বিক দৃষ্টি সংকটের ব্যাখ্যা কী?
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং একজন নিবন্ধিত চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ নিমা ঘোরবানি-মোজাররাদ বলেছেন, ‘এই সংকটে জেনেটিক্স’র ভূমিকা খুবই কম। যদিও মায়োপিয়ার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, শিশুর এটি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।’
‘তবে লাইফস্টাইল ফ্যাক্টরগুলোই বেশি ভূমিকা রাখে বলে মনে করা হয়। বিশেষ করে, বাইরে কম সময় কাটানো এবং পড়ার মতো কার্যকলাপের মাধ্যমে বেশি সময় ধরে ঘরে কিছু বিষয়বস্তুতে ফোকাস করা।’
‘আধুনিক বিশ্বে শিশুরা যেভাবে শ্রেণিকক্ষে দীর্ঘসময় কাটানোর ওপর জোর দিয়ে শিক্ষা লাভ করে, তা তাদের চোখের স্বাস্থ্যের ওপর ক্রমাগত ক্ষতি করছে বলে মনে হয়।’
শিক্ষার প্যারাডক্স
১৯৭০ এর দশকে যুক্তরাজ্যের স্কুল ছাড়ার বয়স ১৫ থেকে ১৬ বছর বাড়ানোর জন্য এই চোখের সমস্যার প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন ঘোরবানি-মোজাররাদ এবং তার সহকর্মীরা। ‘এখন যেহেতু যুক্তরাজ্যে স্কুল ছাড়ার বয়স ১৮, আমি ভাবছি আমরা আবার একই জিনিস খুঁজে পাব কি না,’ বলেন নিমা ঘোরবানি-মোজাররাদ।
‘দেখা যাচ্ছে যে, বাড়ির ভেতরে থাকা এই সমস্যাটিকে আরও খারাপ করতে পারে, সম্ভবত প্রাকৃতিক আলো থেকে গৃহমধ্যস্থ আলোর ভিন্নতার কারণে। সিঙ্গাপুর শৈশব মায়োপিয়া নিয়ে কিছু গবেষণা চালিয়েছে, বিশেষজ্ঞরা একই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন।’
সিঙ্গাপুরের ওই সহযোগী অধ্যাপক অড্রে চিয়া বলেন, ‘আমার বাবার প্রজন্ম বাইরে মাছ ধরা এবং জিনিসপত্রে অনেক সময় কাটিয়েছে। কিন্তু তারপরে সিঙ্গাপুরে নগরায়ণ এলো। অভিভাবকেরা চেয়েছিলেন তাদের বাচ্চারা সেরা স্কুলে প্রবেশ করুক, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুক৷ এটি সব শিশুকে আরও পড়ার জন্য বাড়ির অভ্যন্তরে নিয়ে গেল। কারণ, পড়াটা তাদের জন্য ভালো।’
‘অবশ্যই, পড়া শিশুদের জন্য ভালো। সাক্ষরতা এবং স্কুলিং শিশুদের সুস্থতার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো হারিয়ে গেলে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হতে পারে।’
সাক্ষরতার প্রভাব
নিম্ন এবং মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে, মায়োপিয়ার হার এখনো কম। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ ও ভারত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মধ্যে এই সমস্যা রয়েছে। তবে এটি পরিবর্তিত হচ্ছে। আফ্রিকাতে মায়োপিয়া তুলনামূলকভাবে কম ছিল। কিন্তু গত দশ বছরে সেখানে শৈশব মায়োপিয়ার প্রকোপ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এদিকে নিম্ন-আয়ের দেশগুলোতে শিশুদের এই চোখের সমস্যা নির্ণয় এবং চিকিৎসার অভাব রয়েছে। এতে তাদের জীবন ও শিক্ষার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। ফলে শিশুরা তাদের শিক্ষক বোর্ডে যা লেখেন তা অনুসরণ করতে পারে না এবং স্কুলের অন্যান্য রুটিন কার্যকলাপে অংশগ্রহণ করা কঠিন হয়ে ওঠে।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, যদি চোখের পরীক্ষা ও চশমা দেওয়ার জন্য বড় প্রচেষ্টা না করা হয়, তবে এসব দেশে সাক্ষরতার হারের উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে এই সমস্যাটি আরও বাড়তে পারে।
লকডাউনের প্রভাব
কোভিড-১৯ মহামারির সময়ে লকডাউনে বাড়ির ভেতরে বেশি সময় অবস্থান করেছে শিশুরা।. লকডাউনের সময় সারা বিশ্বে স্কুলগুলো বন্ধ হয়ে যায় – কিন্তু শিশুদের চোখের স্বাস্থ্য আরও খারাপ হয়ে ওঠে। সাধারণত, তারা লকডাউনের সময় ঘরের ভেতরে থাকত। টিভি দেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে থাকত, কারণ শেখার ও বিনোদনের অন্যান্য মাধ্যম অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল।
লকডাউনের কারণে এই মুহূর্তে সহযোগী অধ্যাপক অড্রে চিয়ার সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হলো চার থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের নিয়ে।
তিনি বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে, কোভিড -১৯ এর কারণে, শিশুরা আরও বেশি সময় ঘরের ভেতরে ব্যয় করেছে এবং সেই হার বেড়েছে। আমরা আমাদের তথ্য খুঁজে বের করার জন্য অপেক্ষা করছি।’
চীনের তথ্যে ইতোমধ্যে দেখা যায় যে, লকডাউন ছোট বাচ্চাদের চোখের স্বাস্থ্যের জন্য একটি আঘাত করেছে। একটি গবেষণায় শিশুদের মধ্যে মায়োপিয়া হারের তুলনা করা হয়েছে, যা বার্ষিক স্ক্রীনিং দ্বারা পরিমাপ করা হয়েছে।
গবেষণার অন্যতম সহ-লেখক ও মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজ্যুয়াল সায়েন্সেস অ্যান্ড এপিডেমিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড সি. মুশ বলেছেন, মহামারির আগে, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালে, ছয় বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে সর্বাধিক মায়োপিয়া হার ছিল ৫ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২০ সালের জুনে, ৫ মাস গৃহবন্দী থাকার পর, গবেষকেরা সেই বয়সের শিশুদের দৃষ্টিশক্তি পরিমাপ করেন এবং দেখেন যে এই হার ২১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
গবেষকরা এই প্রভাবটিকে ‘কোয়ারেন্টাইন মায়োপিয়া’ বলে উল্লেখ করেছেন।
কিছু দেশে এই সমস্যা মহামারি লকডাউনের আগে তেমন ছিল না। দেশগুলোতে এখন মায়োপিয়া উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠছে। বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, এমন দেশগুলোতে এই প্রভাব নতুন করে দেখা দিয়েছে, যেখানে শিশুরা সাধারণত মহামারির আগে বাইরে ঘোরাফেরা করত।
সহযোগী অধ্যাপক অড্রে চিয়া বলেছেন, ‘মহামারির লকডাউনের কারণে মায়োপিয়ার হার নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে ওসব দেশে, সেখানের শিশুরা আগে তেমন ঘরে থাকত না। তবে সিঙ্গাপুরের মতো দেশে, যেখানে আমরা আগে থেকেই খুব বেশি বাইরে যাই না, মহামারি দ্বারা সৃষ্ট পরিবর্তনটি এখানে ততটা বড় নাও হতে পারে।’
শিশুদের দৃষ্টিশক্তি রক্ষর উপায়
এই অবস্থার মুখোমুখি হয়ে, অনেক বাবা-মা হয়তো ভাবছেন যে, তারা তাদের সন্তানের দৃষ্টিশক্তি রক্ষা করার জন্য কী করতে পারেন। যেহেতু চোখের স্বাস্থ্য একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা, তাই অনেক দেশ এটিকেও অগ্রাধিকার দিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ চীন বিভিন্ন কৌশল অনুসরণ করছে। সতর্ক করে দিয়েছে যে, এই সমস্যা পরবর্তীতে বহু শিল্পে শ্রমের ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।
ঘোরবানি-মোজাররাদ বলেছেন, ‘দূরের সিনিজ ঝাপসা দেখা’র সমস্যা আরও খারাপ হওয়া বন্ধ করার জন্য বিদ্যমান বেশিরভাগ পদক্ষেড় চীনে পরীক্ষা করা হয়েছে।’
ফলাফল মিশ্র হয়েছে। চোখের ব্যায়াম, যা আগে কম খরচের স্বাস্থ্যকৌশল হিসেবে সুপারিশ করা হয়েছিল, দীর্ঘমেয়াদে মায়োপিয়া প্রতিরোধে তা অপর্যাপ্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
চীন শিশুদের ভিডিও গেমিং প্রতি সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সীমিত করেছে – তবে এটি মূলত স্ক্রিনটাইমের পরিবর্তে গেমিংয়ের অনুভূত নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে উদ্বেগের জন্য নির্দেশিত হয়েছিল। স্ক্রিনটাইম ও মায়োপিয়ার মধ্যে সম্ভাব্য যোগসূত্রের প্রমাণটি এখনো চূড়ান্ত নয়।
ঘোরবানি-মোজাররাদ বলেন, ‘অনেক রকমের স্ক্রিন এবং অনেক ভেরিয়েবল আছে। তাই সঠিক ঝুঁকির তথ্য পাওয়া কঠিন। একজন অভিভাবক হিসেবে স্ক্রিন সম্পর্কে সতর্ক হওয়া উচিত। বিশেষ করে গবেষণা দেখায় যে, এটি একটি ফ্যাক্টর হতে পারে। আপনার সন্তান যদি সত্যিই স্ক্রিনটাইম পছন্দ করে, তবে তারা এটি করার সময় তাদের ঘরের বাইরে বসান।’
অন্য সমাধানগুলো প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে। সিঙ্গাপুরে মায়োপিয়া মোকাবিলায় বিশেষ কন্টাক্ট লেন্স বা চশমার ব্যবহার করা হয়। গবেষকেরা মৌখিক পরিপূরক, চোখের ব্যায়াম, চোখের শিথিলকরণ মেশিন, আকুপ্রেশার, বা চৌম্বকীয় থেরাপির মতো চিকিৎসাগুলো কার্যকর বলে পরামর্শ দেওয়ার কোনো প্রমাণ খুঁজে পাননি। তবে সাধারণ চোখের ড্রপ সাহায্য করতে পারে।
নতুন রেড-লাইট থেরাপিও কাজে আসতে পারে। ঘোরবানি-মোজাররাদ বলেছেন, ‘মেশিনটি সপ্তাহে পাঁচ দিন ধরে প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য একটি শিশুর চোখে লাল আলো নিঃসরণ করে। দেখা যায় যে, এটি চোখের ওই সমস্যা বিস্তারের পরিমাণকে ধীর করে। কিন্তু কেন করে, তা আমরা পুরোপুরি বুঝতে পারছি না।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাবা-মায়েরা শিশুকে নিয়ে চিন্তিত হলে, তাদের একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে কথা বলা উচিত।
সুস্থ জীবন, সুস্থ চোখ
বিশ্বের অনেক জায়গায় এক জোড়া চশমা জীবনে পরিবর্তন আনতে পারে। ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে চীনে অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সাথে কাজ করেছেন কংডন। অরবিস একটি দাতব্য সংস্থা, যা চীন ও ভারতের ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন শিশুকে কম খরচে চশমা প্রদান করেছে।
কিন্তু গরিব বাবা-মায়ের জন্য শিশুকে চশমা দেওয়াটা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তাই সবচেয়ে কার্যকর, প্রমাণভিত্তিক প্রতিরোধ কৌশলটি নেওয়া উচিত। এটি আশ্চর্যজনকভাবে কম প্রযুক্তির। ধনী-গরিব নির্বিশেষে সব দেশে প্রযোজ্য। আর তা হলো- ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটানো।
গবেষকেরা এখনো বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করছেন যে, কেন ঘরের বাইরে সময় দেওয়া এবং প্রাকৃতিক আলোতে থাকা মায়োপিয়া প্রতিরোধে সহায়তা করে। কিন্তু আপাতত, তাদের সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শেষ কথা হলো যে, বাচ্চাদের এই ‘প্রাকৃতিক বুস্ট’ ব্যবহার নিশ্চিত করাই চ্যালেঞ্জ।
সিঙ্গাপুরে, বৃহত্তর এই জাতীয় মায়োপিয়া-লড়াই কৌশলের অংশ হিসেবে প্রিস্কুলে বাইরের সময় দ্বিগুণ করে এক ঘণ্টা করা হয়েছে। হোমওয়ার্ক করার সময় কাটানোর জন্য সবচেয়ে কম বয়সী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে।
সহযোগী অধ্যাপক অড্রে চিয়া বলেন, ‘মায়োপিয়া সম্পর্কে অনেক অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে। তবে কয়েক দশকের গবেষণায় যে অগ্রগতি হয়েছে তা আশাব্যঞ্জক। তিন বছর আগে আমরা জানতাম না সূর্যালোক কতটা গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘একটি শিশুর দৃষ্টিশক্তি তার সাধারণ সুস্থতার অংশ। আমরা শুধু চোখের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না। পুরো শরীর ও ভালো মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কেও মনোযোগ দিতে চাই। আমরা চাই, আমাদের বাচ্চারা সুস্থ জীবনযাপন করুক।’
তথ্যসূত্র : বিবিসি