মো. খসরু চৌধুরী (সিআইপি)
১৯২০ সালের ১৭ মার্চ বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দী থেকেছেন। দুবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন, কিন্তু আত্মমর্যাদা ও বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো মাথা নত করেননি।
দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং ’৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।
জাতির পিতা ছিলেন বিশ্বের নির্যাতিত-নিপীড়িত ও শোষিত-বঞ্চিত মানুষের মুক্তির দূত- স্বাধীনতা ও শান্তির প্রতীক। বাংলা ও বাঙালি যত দিন থাকবে, এ পৃথিবী যত দিন থাকবে, পৃথিবীর ইতিহাস যত দিন থাকবে তিনি একইভাবে প্রজ্বলিত হবেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে, প্রতিটি মুক্তিকামী, শান্তিকামী, মানবতাবাদীর হৃদয়ে। বঙ্গবন্ধুর জীবনদর্শন চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবে, পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এই মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে।
বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু দেশের শত্রুরা তাকে হত্যা করে দেশকে নরকে পরিণত করেছিলো। আল্লাহর রহমতে তার সুযোগ্য কন্যার হাত ধরে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
বিশ্ব ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুই একমাত্র নেতা যিনি একই সঙ্গে একটি স্বাধীন দেশ ও স্বাধীন জাতির পিতা। বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তিত্ব, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দেশপ্রেম দিয়ে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রম আর অসীম ত্যাগের বিনিময়ে আজকের এ বাংলাদেশ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একজন মহামানব যিনি বাঙালি জাতিকে একটি পতাকা দিয়েছেন, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড দিয়েছেন এবং বিশ্বসভায় বাঙালি জাতিকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। তাঁরই দেখানো পথ ধরে দেশ আজ এগিয়ে চলেছে। বঙ্গবন্ধু বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম মহানায়ক। সেরা মুক্তি সংগ্রামী, সেরা রাষ্ট্রনায়ক। বঙ্গবন্ধু নিজের কিংবা তাঁর পরিবারের জন্য কখনোই কিছু চাইতেন না। খুবই সাধারণ জীবন-যাপন করতেন।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হয়েও সরকারি বাসভবনে থাকতেন না। নিরাভরণ, ছিমছাম আর আটপৌরে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিতেই আমৃত্যু থেকেছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ব্যাপক অগ্রগতির জন্য দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার প্রবর্তক। সংবিধানে তিনি অর্থনৈতিক মুক্তিকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতির বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেছেন। আজ তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ টেকসই প্রবৃদ্ধি ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের আদর্শ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে উঠেছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না, সেটা আজ প্রমাণ হয়েছে। কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি। বঙ্গবন্ধুর সৃষ্টি করা বাংলাদেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা চারবারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু দেশ গড়ার কাজে খুব বেশি সময় হাতে পাননি। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির মদদে কিছু বিশ্বাসঘাতক সেনাসদস্য তাঁকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। জাতির মুখে কালিমা লেপন করেছিল।
বিদেশে থাকায় এই হত্যাকাণ্ড থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন তাঁর দুই কন্যা। আমাদের সৌভাগ্য, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা সেদিন নিজের জীবনের মায়া না করে স্বাধীনতার অর্জনগুলো রক্ষায় এগিয়ে এসেছিলেন। দেশকে আবার বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে এগিয়ে নিতে প্রাণপণ লড়াই করে চলেছেন। তাঁর সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। নানা ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলেছে। এসবই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথে প্রত্যাবর্তনের কারণে।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন।