‘খেলা হবে’ স্লোগানে বিরক্তি!

‘খেলা হবে’ স্লোগানে বিরক্তি!
‘খেলা হবে’ স্লোগানে বিরক্তি!

‘খেলা হবে’। এটি একটি রাজনৈতিক স্লোগান। বাংলাদেশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ত্রিপুরার নেতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে স্লোগানটি।

২০১৩ সালে এই স্লোগানের প্রথম ব্যবহার করেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।
তখন তিনি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিএনপির আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্লোগানটি দেন।

চলতি বছরের ১৬ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে স্লোগানটি ব্যবহার করেন। এখন তিনি প্রায় প্রতিদিনই তার সভা-সমাবেশে ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি দেন।

বিএনপির কিছু নেতা বিশেষ করে নেত্রীও ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি দিচ্ছেন তাদের বক্তব্যে।

২০২১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও স্লোগানটি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। মূলত তৃণমূল কংগ্রেস এটির ব্যবহার শুরু করে। দেশটিতে এই স্লোগানটি এখনো চলছে।

আনন্দবাজার পত্রিকার খবর অনুযায়ী, গত শুক্রবার বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এই স্লোগান দেন।

এখন প্রশ্ন উঠেছে, এই স্লোগান কতটা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে? এই প্রশ্নের উত্তর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমেদ দিয়েছেন।

দৈনিক প্রথম আলোর খবরে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের এই সদস্য বলেছেন, ‘খেলা হবে’ কোনো রাজনৈতিক স্লোগান হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘আমরা আজকাল একটা স্লোগান বের করেছি, ‘খেলা হবে’। আমার দৃষ্টিতে এটা রাজনৈতিক স্লোগান না, হতে পারে না। আমার বিবেক বলে, এই স্লোগানটা এভাবে না দেওয়াই উচিত।’

বিষয়টি নিয়ে আজ রবিবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও একই সুর তুলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘খেলা হবে’ স্লোগানটি রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত স্লোগান।

শুধু যে এই রাজনীতিবিদ স্লোগানটি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন তা কিন্তু না। এখন অনেকের কাছেই এটি বিরক্তির বিষয়।

একজন সংবাদকর্মী হিসেবে আমিও বিরক্ত। কোনো নিউজে কোনো নেতার বক্তব্যে এখন এই স্লোগান দেখলে তা যথাসম্ভব এড়িয়ে যাই। কোনোমতেই তা আর শিরোনামে আনি না।

একটা গল্প দিয়ে শেষ করি:

কর্মব্যস্ত দিন শেষে রাতে টেলিভিশনে খবর দেখছিলেন শাহেদ আলী (ছদ্মনাম)। বিশিষ্ট নেতা বলছেন, ‘খেলা হবে’। বিরক্ত এই বেসরকারি চাকরিজীবী চ্যানেলটি বদলিয়ে ফেললেন।

ঠিক সেই সময় বাড়ি থেকে তার স্ত্রী ফোন করেন।স্ত্রীকে বললেন, কী করো? কিছু না।ও আচ্ছা রাফিন কী করে? ওইযে শোনছো না- বলতেছে, ‘খেলা হবে’। এটা কোথায় শিখলো? টিভিতে খবরে অমুক নেতার বক্তব্য শোনে বলতেছে।ও আচ্ছা। ওকে এসব বক্তব্য শোনিও না।ওকে।

এই বাবা যেমন তার সন্তানকে এই স্লোগান শেখাতে চাচ্ছেন না। তেমনি কোনো স্কুলের শিক্ষকও তার ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বলবেন না পরীক্ষায় পাস না করলে বা পড়া না শিখলে ‘খেলা হবে’।

প্রবীণ নেতারাও হলেন তরুণ নেতাকর্মীদের শিক্ষক। তাদের সভা-সমাবেশে হাজার হাজার তরুণ নেতাকর্মী যান।তাদের বক্তব্য শোনেন।তাহলে প্রবীণ নেতারা কি তরুণদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেবেন না? যদিও তরুণ নেতাকর্মীদের মুখে এই স্লোগানটি এখনো তেমনভাবে শোনা যাচ্ছে না।

লেখক : জুনাইদ আহমেদ, গণমাধ্যমকর্মী

Leave a Reply