নাজমুল হাসান রানা
জেন-জি’র গল্প শোনালেও এই দেশ হাঁটছে উল্টো পথে। এরা আবার ৯০ দশকে ফিরতে চায়! যেখানে পড়ালেখা মানে মুখস্তকরণ। গণিত মানে সূত্র ঠোটস্থ করা আর পিথাগোরাসের উপপাদ্য আওড়ানো। সেই সাথে টিউশনির শনিগ্রহে গতায়াত। মজার বিষয় হচ্ছে, এক সময় যাদের ফুলস্টপ পর্যন্ত বানান করে দিতে হয়েছে।
একটা কৌতুক আছে, মাস্টার পরীক্ষার হলে সব বানান সহকারে বলে দিচ্ছেন, পুরো বাক্য শেষে বলছেন ফুলস্টপ (ডট)! ছাত্র উঠে প্রশ্ন করছেন, ‘স্যার ফুলস্টপ বানান কি?’ স্যার রেগে গিয়ে বলেছেন, ‘কলম চাইপ্পা ধর।’ আর সেই কলম চাইপ্পা ধরা প্রজন্মের শিক্ষিত উত্তরসূরীরাই আসছেন নতুন কারিকুলাম নিয়া হাসিঠাট্টা করতে। আর সেই সুরে তাল মিলাচ্ছেন কলম চাইপ্পা ধর যুগের শিক্ষা উপদেষ্টা।
এই কারিকুলাম বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়া আলোচনা হতে পারে, তবে গোটা কারিকুলাম মন্দ নয়। গতানুগতিক পরীক্ষা নেই বলে, কলম চাইপ্পা ধর প্রজন্ম হতাশ। মনে করছেন শিক্ষা শ্যাষ। কিছু মাস্টারও কারিকুলাম বুঝতে ও বাস্তবায়ন করতে বেশি খাটতে হয় বলে এর বিপক্ষে, এরাও আসলে কলম চাইপ্পা ধর প্রজন্মের আশপাশের লোক। গতর ও ঘিলু কোনোটাই খাটাবে না!
জীবন ও জীবিকায় রান্না শেখানো হয়, এটা এরা মানতে পারছে না। তাদের দাবি, স্কুল নাকি রান্নাঘর নয়। অথচ জীবন ও জীবিকা যে সাবজেক্টের নাম সেখানে তো রন্ধন থাকবেই। রন্ধনকর্ম ছাড়া কোনো জীবন আছে কী?
আবার শারিরীক শিক্ষায় বয়ঃসন্ধি কিংবা পিরিয়ড বা যৌন সচেতনতার যে পার্ট আছে, তাতেও তাদের আপত্তি। অথচ এসব জানাও জরুরি। এমনকি আমরা যারা মাদ্রাসায় পড়েছি, তাদেরকে এই হায়েজ নেফাজ (পিরিয়ড সংক্রান্ত শিক্ষা), এমনকি সঙ্গম বিষয়ক বিস্তারিত বিষয়েও পড়ানো হয়। তাতে হুজুররা আপত্তি করেন না। তাতে আমরা ভুল কিছু শিখিনি, আপত্তি কেবল স্কুলের শারিরীক শিক্ষায়।
আবার মজার ছলে পাঠদান প্রক্রিয়া নিয়াও এদের আপত্তি। ভগ্নাংশ তিন প্রকার, এটা গানের ছন্দে পড়ানোটাকে পর্যন্ত এরা ট্রোল করেছে।অথচ এরা আশা করেন এদেশের শিক্ষার মান ব্রিটিশ লেভেলের হবে।
এরা নতুন ধারার মূল্যায়নেরও বিরোধিতা করে। কারণ এতে করে বাচ্চাদের প্রথম হওয়ার নগ্ন দৌড়ে নামানো যায় না। গল্প করা যায় না, ‘ভাবি, ওকে তো তিন সাবজেক্ট ১০ জন প্রাইভেট টিচারে পড়ায়।’
আরো অনেক বহুবিধ বিষয়ে এই কলম চাইপ্পা ধর প্রজন্মের দোসররা আপত্তি তুলে এই কারিকুলামের বি’নাশ চাইছেন। তাদের আসল উদ্দেশ্য আবার মুখস্থ যুগ ফিরিয়ে আনা আর দেশকে ফের ১৯৭২ সালের সেই ফুলস্টপে ফিরিয়ে নেয়া!
লেখক : সহ-সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন