মো. খসরু চৌধুরী (সিআইপি)
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শান্তিপূর্ণ, ন্যায়সংগত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উত্তরণে পাঁচটি ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। স্মার্ট, উদ্ভাবনী ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে যা অবদান রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ৭ মার্চ কাতার ন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ওপর জাতিসংঘের পঞ্চম সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ আহ্বান শুধু প্রাসঙ্গিকই নয়, বিশেষ গুরুত্বের দাবিদার।
প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশিত পাঁচটি প্রধান সহযোগিতার মধ্যে রয়েছে প্রথমত, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত দুর্যোগ মোকাবিলায় পদক্ষেপসহ স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে কার্যকরী প্রযুক্তি স্থানান্তরের জন্য আন্তর্জাতিক বেসরকারি খাতকে যথাযথ প্রণোদনা প্রদান। দ্বিতীয়, ব্রডব্যান্ড বিভাজন ও প্রযুক্তিগত বৈষম্য কমাতে ডিজিটাল অবকাঠামোতে বিনিয়োগ সহায়তা। তৃতীয়ত, এলডিসিভুক্ত দেশগুলো যেসব সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে তা মোকাবিলায় পেশাদার গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি। চতুর্থত, উত্তরণের পরও বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যালস এবং কৃষি-রাসায়নিকের জন্য ট্রিপস চুক্তির অধীনে এলডিসি মওকুফের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা। পঞ্চমত, স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে উদ্ভাবন এবং উন্নয়ন দুটির জন্যই সহায়ক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ ব্যবস্থা বিকাশে সহায়তা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনুদান নয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো (এলডিসি) আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী প্রকৃত কাঠামোগত পরিবর্তনের জন্য তাদের প্রাপ্য চায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশগুলো দান চায় না, আমরা যা চাই তা হলো আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির অধীন আমাদের পাওনা।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোহা কর্মসূচি বিশ্বের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য আশার আরেকটি প্রতিশ্রুতি। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর প্রকৃত কাঠামোগত পরিবর্তনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই তাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে। উত্তরণ পর্যায়ে থাকা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর পারফরম্যান্সের জন্য কিছু প্রণোদনা থাকা উচিত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়া আন্তর্জাতিক সুবিধা এসব দেশের আরো বেশি সময় ভোগ করা উচিত। তাদের আরো বেশি বিনিয়োগ দরকার এবং কিভাবে তাদের উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াতে হবে, তা জানা দরকার। তাদের জন্য কিছু উদ্ভাবনী এবং ট্রানজিশনাল ফিন্যান্সিং মেকানিজম থাকতে পারে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টেকসই সহযোগিতা প্রদানের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যে অংশ দ্বিগুণ করতে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর টেকসই সহায়তা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে টেকসই ঋণ সহায়তা দিতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য জলবায়ু অর্থায়ন নমনীয় এবং অনুমানযোগ্য করা উচিত। স্বল্পোন্নত দেশগুলোতে প্রযুক্তি স্থানান্তর বাস্তব এবং অর্থপূর্ণ হওয়া উচিত।
অভিবাসী শ্রমিকের সুরক্ষা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অধিকার এবং ভালো থাকার জন্য অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষা প্রয়োজন। আমরা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর ২২৬ মিলিয়ন যুবশক্তিকে ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। করোনা মহামারি এবং পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় একটি ধাক্কা দিয়েছে। বেশির ভাগ স্বল্পোন্নত দেশে মূল্যস্ফীতির কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ুসংকট এবং কিছু স্বল্পোন্নত দেশে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাত।’
জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ১.২ মিলিয়ন জোরপূর্বক বিতাড়িত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয় দিয়েছি। এর তাত্ক্ষণিক কোনো সমাধান নেই।’
বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে তাকিয়ে আছি। জিডিপির ভিত্তিতে বিশ্বের বড় ৫০টি অর্থনীতির মধ্যে বাংলাদেশ একমাত্র স্বল্পোন্নত দেশ।’
প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্পে বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য সম্পর্কে অবহিত করেন। বলেন, আমরা এখন ২০২৬ সালের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি। এই অন্তর্বর্তীকালে আমাদের সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয় হবে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনে বিনিয়োগ। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বিশ্বের কাতারে নিজেদের নেওয়ার উচ্চভিলাসী পরিকল্পনাও সরকার ঘোষণা করেছে।
করোনাভাইরাস ও রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট বিশ্বমন্দার মধ্যেও বাংলাদেশ অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যাপারে অটল। এ লক্ষ্য পূরণে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই। পারস্পরিক স্বার্থেই বিকাশমান দেশগুলোকে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলোর হাত বাড়াতে হবে।
শত বাধা-বিপত্তি এবং হত্যার হুমকিসহ নানা প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে শেখ হাসিনা ভাত-ভোট এবং সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য অবিচল থেকে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণ অর্জন করেছে গণতন্ত্র ও বাক-স্বাধীনতা। শেখ হাসিনার অপরিসীম আত্মত্যাগের ফলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে।
কাতারে জাতিসংঘের এলডিসি সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ভাষণ প্রমাণ করে শেখ হাসিনা শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি এখন বিশ্বনেতা। আজ বিশ্বের সব দেশেই শেখ হাসিনার প্রশংসা করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার রাষ্ট্র পরিচালনা এবং উন্নয়ন দেখে বিশ্ব নেতারা তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নেন।
লেখক: পরিচালক, বিজিএমইএ; শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ; চেয়ারম্যান, নিপা গ্রুপ ও কেসি ফাউন্ডেশন