মোজাহিদুল ইসলাম টিটু
সবাই সোচ্চার, তবুও দুর্নীতি কমছে না। এর কারণ হলো-দুর্নীতি করছেন বহু মানুষ, কিন্তু তারা যে দুর্নীতি করছেন, এটাকে তারা দুর্নীতি বলেই মনে করছেন না। এদেশে উৎকৃষ্টমানের দুর্নীতিবাজও মনে করেন, তিনি ঠিক লাইনেই আছেন। মানে হলো, তিনি যা করছেন এটা দুর্নীতি না।
ধরেন, বহু মানুষ আছেন এমন যারা সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে চাকরি নিয়েছেন। পরীক্ষায় অন্যকে দিয়ে প্রক্সি দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন। তদবির করে চাকরি নিয়েছেন। ঘুষ দিয়ে চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু তারা মনেই করছেন না, এটা দুর্নীতি।
এদেশে ঘুষ দিয়ে চাকরি নেয়াটাকে অধিকাংশ মানুষই দুর্নীতি মনে করেন না। আপনার আশেপাশে এমন হাজারটা মানুষ পাবেন যারা ১০-১৫ লাখ টাকা নিয়ে বসে আছেন চাকরির জন্য। বহু নামাজি মানুষ পাবেন যারা ড. ইউনুসকে সুদখোর বলে গালি দেবেন, কিন্ত ছেলে বা মেয়ের জন্য ঘুষ দিয়ে বা দুই নম্বরি করে চাকরি নেয়াটাকে খারাপ কিছু মনে করেন না। সুদ খাওয়া হারাম, আর ঘুষ খাওয়া বা দেওয়া নিশ্চয়ই আরামের, কী বলেন?
ব্যাপারটা হলো এমন, আমরা সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার, কিন্তু কোথাও টাকা দিয়ে বা তদবির করে চাকরি নেয়ার সুযোগ থাকলে দৌড় দিয়ে সেটা পাওয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগি।
এদেশে তদবির করে চাকরি নেয়াটাকেও মানুষ দুর্নীতি বলে মনে করে না। কারণ দৃশ্যত যেহেতু টাকা দেয়ার ব্যাপারটা থাকে না, তাই। কিন্তু তদবির করে চাকরি নেয়া মানে প্রতিযোগিতায় নামার আগেই নিজের পুরস্কার বুক করে রাখার মতো ব্যাপার। এতে আর লেবেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকে না। স্বজনপ্রীতিও তেমন।
আমাদের অবস্থা এমন, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করবো এবং নিজে হাজার কোটি টাকার মালিক হয়ে যাবো চুরি-বাটপারি করে। বেনজির সাহেবের মতো আরকি।
এই দেশে এমন কিছু মানুষ পাবেন, যারা রাতদিন ২৪ ঘণ্টা মাথায় টুপি দিয়ে রাখবে, কথায় কথায় আল্লাহ এবং রাসুলের নাম নেবে, কিন্তু টাকা না দিলে আপনার ফাইল আটকে রাখবে। কিংবা প্রশ্ন ফাঁস করবে, মোটা অংকে প্রশ্ন বিক্রি করবে। যদিও ধর্মেই বলা আছে উপার্জন হালাল না হলে ইবাদত কবুল হয় না।
এখন এই যে, এসব মানুষের মেন্টালিটি যদি সিগমুন্ড ফ্রয়েড স্বয়ং মাটির নিচ থেকে উঠে আসেন তারপরও এসব সাইকোলজির আগামাথা তিনি কিছু বুঝবেন কিনা, কে জানে। অদ্ভুত, বড়ই অদ্ভুত জাতি আমরা।
লেখক : সিনিয়র সহ-সম্পাদক, জাগো নিউজ